এদের অপর নাম যতি চিহ্ন।
১।
কমা (,)
ক. বাক্য সুস্পষ্ট করতে বাক্যকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করে প্রতিটি ভাগের মাঝে কমা বসে।
যেমন- সুখ চাও, সুখ পাবে বই পড়ে।
খ. পরস্পর সম্পর্কিত একাধিক বিশেষ্য বা বিশেষণ পদ একসঙ্গে ব্যবহৃত হলে শেষ পদটি ছাড়া প্রতিটির পরে কমা বসে।
যেমন- ১৬ ডিসেম্বর আমাদের মন সুখ, স্বাচ্ছন্দ্য, ভালবাসা, আনন্দে ভরে থাকে।
গ. সম্বোধনের পরে কমা বসে।
যেমন- রশিদ, এদিকে এসো।
ঘ. জটিল বাক্যের প্রত্যেকটি খন্ডবাক্যের পরে কমা বসে।
যেমন- যে পরিশ্রম করে, সেই সুখ লাভ করে।
ঙ. কোন বাক্যে উদ্ধৃতি থাকলে, তার আগের খন্ডবাক্যের শেষে কমা (,) বসে।
যেমন- তিনি বললেন, ‘আমি তোমাকে নিতে এসেছি’; তুমি বলেছিলে, ‘আমি কালকে আবার আসবো।’
চ. মাসের তারিখ লেখার সময় বার ও মাসের পর কমা বসে।
যেমন- ২৫ বৈশাখ, ১৪১৮, বুধবার।
ছ. ঠিকানা লেখার সময় বাড়ির নাম্বার বা রাস্তার নামের পর কমা বসে।
যেমন- ৬৮, নবাবপুর রোড, ঢাকা- ১০০০।
জ. ডিগ্রির পদবি লেখার সময় কমা ব্যবহৃত হয়।
যেমন- ডক্টর মুহম্মদ এনামুল হক, এম,এ, পি-এইচ,ডি।
২.
সেমিকোলন (;)
ক. কমা-র চেয়ে বেশি কিন্তু দাঁড়ি-র চেয়ে কম বিরতি দেয়ার জন্য সেমিকোলন ব্যবহৃত হয়। যেমন-
আমরা সবাই সবাইকে ভালবাসি; আসলেই কি সবাই ভালবাসি?
খ. একাধিক স্বাধীন বাক্যকে একটি বাক্যে লিখলে সেগুলোর মাঝখানে সেমিকোলন ব্যবহৃত হয়। যেমন- তিনি শুধু তামাশা দেখিতেছিলেন; কোথাকার জল কোথায় গিয়া পড়ে।
গ. দুটি বা তিনটি বাক্য সংযোজক অব্যয়ের সাহায্যে যুক্ত না হলে সেমিকোলন ব্যবহৃত হয়।
যেমন - আগে পাঠ্য বই পড়; পরে গল্প-উপন্যাস।
ঘ. সেজন্যে , তবু তথাপি , সুতরাং ইত্যাদি যে-সব অব্যয় বৈপরীত্য বা অনুমান প্রকাশ করে তাদের আগে বা দুটি সন্নিহিত হলে সেমিকোলন বসে।
ঙ. যেমন - সে ফেল করেছে; সেজন্য সে মুখ দেখায় না। মনোযোগ দিয়ে পড়; তাহলেই পাশ করবে।
৩.
দাঁড়ি বা পূর্ণচ্ছেদ (।)
ক. প্রতিটি বাক্যের শেষে দাঁড়ি ব্যবহৃত হয়। দাঁড়ি দিয়ে বাক্যটি শেষ হয়েছে বোঝায়।
যেমন- আমি কাল বাড়ি আসবো।
৪.
প্রশ্নবোধক চিহ্ন
ক. প্রশ্নবোধক বাক্যের শেষে প্রশ্নবোধক চিহ্ন ব্যবহৃত হয়।
যেমন-তুমি কেমন আছ?
খ. *সন্দেহ বোঝাতে বাক্যের মধ্যে প্রশ্নবোধক চিহ্ন বসে।
যেমন- এটা তোমার বই? ঠিক তো ?
৫. বিস্ময়সূচক বা আশ্চর্যবোধক চিহ্ন
ক. বিস্মিত হওয়ার অনুভূতি প্রকাশের জন্য কিংবা অন্য কোন হৃদয়ানুভূতি প্রকাশের জন্য এই চিহ্ন ব্যবহৃত হয়।
যেমন- আহা! কী চমৎকার দৃশ্য।
ছি! তুমি এত খারাপ।
হুররে! আমরা খেলায় জিতেছি।
খ. আগে সম্বোধনের পরেও বিস্ময়সূচক চিহ্ন ব্যবহার করা হতো। কিন্তু আধুনিক নিয়ম অনুযায়ী সম্বোধনের পরে কমা বসে। তাই পুরোনো লেখায় সম্বোধনের পরে বিস্ময়সূচক চিহ্ন থাকলেও এখন এটা আর লেখা হয় না। যেমন- জননী! আজ্ঞা দেহ মোরে যাই রণস্থলে।
গ. আবেদন , ভর্তি, হতাশা, আনন্দ ইত্যাদি মনোভাব প্রকাশের ক্ষেত্রেও বিস্ময়চিহ্ন বসে ।
ঘ. বাক্যের মধ্যে বন্ধনীর মধ্যে প্রয়োজন হলে বিস্ময় চিহ্ন বসে।
৬. কোলন
ক. একটি অপূর্ণ বাক্যের পর অন্য একটি বাক্য লিখতে হলে কোলন ব্যবহার করতে হয়।
যেমন- সভায় ঠিক করা হল : এক মাস পর আবার সভা অনুষ্ঠিত হবে।
প্রতিজ্ঞা করলাম : আর মিথ্যা বলবো না।
খ. কোনো বিবৃতিকে সম্পুর্ণ করতে দৃষ্টান্ত দিতে হলে কোল ব্যবহার করা হয়।
যেমন- পদ পাঁচ প্রকার: বিশেষ্য, বিশেষণ, সর্বনাম, অব্যয়, ও ক্রিয়া ।
গ. উদাহরণ, তালিকা , ব্যাখ্যা , বিশদ মন্তব্যর আগে কোলন বসে।
যেমন - বাড়িতে যে সব জিনিস নিতে হবে : আম, চাল, ডাল , তেল ও দুই গজ সাদা সুতি কাপড়।
ঘ. কটা বেজে কত মিনিট তা সংখ্যায় প্রকাশ করতে
যেমন- ৮:২০; ১১:৪৫ ...
ঙ. চিঠিপত্র ও বিভিন্ন রকমের ফরমে ভুক্তি, উপভুক্তির পরে কোলন বসে।
যেমন - নাম: , পিতার নাম: , বিষয়:, ঠিকানা: ,
চ. তারিখ ...
ছ. গণিতে অনুপাত বোঝাতে কোলন বসে ।
যেমন- ফেলের হার
৩:৮৯ণ
ঞ. প্রশ্ন রচনায় কোলন বসে।
যেমন - টীকা লেখ: । ব্যাখ্যা লেখ:।
৭. ড্যাশ (-)
ক. যৌগিক ও মিশ্র বাক্যে দুই বা তার চেয়েও বেশি পৃথক বাক্য লেখার সময় তাদের মধ্যে সমন্বয় সাধন করতে ড্যাশ চিহ্ন ব্যবহার করা যায়।
যেমন- তোমরা দরিদ্রের উপকার কর- এতে তোমাদের সম্মান যাবে না- বাড়বে।
খ. কোনো কথার দৃষ্টান্ত বা বিস্তার বোঝাতে ড্যাশ চিহ্ন ব্যবহৃত হয়
গ. বাক্য অসম্পূর্ণ থাকলে বাক্যের শেষে ড্যাশ চিহ্ন বসে
ঘ. গল্পে উপন্যাসে প্রসঙ্গের পরিবর্তন বা ব্যাখ্যায় ড্যাশ চিহ্ন ব্যবহৃত হয় নাটক বা গল্প-উপন্যাসে সংলাপের আগেও ড্যাশ চিহ্ন বসে
ঞ. পৃথক ভাবাপন্ন দুই বা ততোধিক বাক্যের সমন্বয় বোঝাতে ড্যাশ চিহ্ন ব্যবহূত হয়।
যেমন: শিশির— না, এ নামটা আর ব্যবহার করা চলিল না।
৮. কোলন ড্যাস (:-)
উদাহরণ বা দৃষ্টান্ত প্রয়োগের জন্য কোলন ড্যাস ব্যবহৃত হয়।
যেমন- পদ পাঁচ প্রকার :- বিশেষ্য, বিশেষণ, সর্বনাম, অব্যয় ও ক্রিয়া।
৯.
হাইফেন বা সংযোগ চিহ্ন
সমাসবদ্ধ পদের অংশগুলো বিচ্ছিন্ন করে দেখানোর জন্য হাইফেন ব্যবহৃত হয়। অর্থাৎ, দুইটি পদ একসঙ্গে লিখতে গেলে হাইফেন দিয়ে লিখতে হয়।
যেমন- সুখ-দুঃখ, মা-বাবা।
১০. ইলেক বা লোপ চিহ্ন
কোন বর্ণ লোপ করে বা বাদ দিয়ে সংক্ষিপ্ত উচ্চারণ বোঝাতে ইলেক বা লোপ চিহ্ন ব্যবহৃত হয়। কবিতা বা অন্যান্য সাহিত্যে এটি ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
যেমন-
মাথার ’পরে জ্বলছে রবি। (’পরে= ওপরে)
পাগড়ি বাঁধা যাচ্ছে কা’রা? (কা’রা = কাহারা)
১১. উদ্ধরণ চিহ্ন
বক্তার কথা হুবুহু উদ্ধৃত করলে সেটিকে এই চিহ্নের মধ্যে রাখতে হয়। অর্থাৎ, প্রত্যক্ষ উক্তিকে এই চিহ্নের মধ্যে রেখে লিখতে হয়।
যেমন- নবী বলেছেন, ‘তোমাদের কাছে আমার কাছে সি ব্যক্তি প্রিয় যে সবচেয়ে বেশি চরিত্রবান’।
১২. ব্র্যাকেট বা বন্ধনী চিহ্ন ( ).{ }. [ ]
ক. এই তিনটি চিহ্নই প্রধানত গণিতে ব্যবহূত হয়।
খ. তবে প্রথম বন্ধনীটি বিশেষ ব্যাখ্যামূলক অর্থ সাহিত্যে ব্যবহূত হয়ে থাকে।
যেমন: ত্রিপুরায় (বর্তমানে কুমিল্লা) তিনি জন্মগ্রহণ করেন